বোয়ালিয়া :১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবসেত্মর পরবর্তীকালে মহববতপুরের রায় মজুমদার ও বোয়ালিয়ার দে চৌধুরী জমিদার/তালুকদার ছিলেন। মতলব পৌরসভার বোয়ালিয়া গ্রাম সর্বদিক দিয়েই সমৃদ্ধশালী ছিলো। এটি প্রাচীন বর্ধিষ্ণু লোকের বাসস্থান। বোয়ালিয়াতে হাজার হাজার বানর ছিলো। বোয়ালিয়ার গ্রাজুয়েট বাড়িতে ৫০ জন গ্রাজুয়েট ছিলো। এ বাড়ির কেউই সরকারি চাকুরী করেন নাই। সকলেই শিক্ষকতা করতেন। বাড়িটি গ্রেজুয়েট বাড়ি নামে পরিচিত(বর্তমান সুবল মাস্টারের বাড়ি)। কুমিল্লার বিখ্যাত ঈশ্বর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক ছিলেন এ গ্রামেরই সমত্মান হরেন্দ্র চক্রবর্তী। বোয়ালিয়ার দানশীল ও ধার্মিক জমিদার রাজকুমার চৌধুরী মতলবের জগন্নাথ মন্দির্ও মসজিদের জন্য জায়গা দান করেন। জমিদার পুত্র ললিত মোহন রায় চৌধুরী বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, বাজার ও ডাকঘর স্থাপন করেন। স্কুলের খেলার মাঠটির সুনাম ছিলো। মাঠটির নাম রাজকুমার রায় মাঠ। ইন্টার স্কুল স্পোর্টস এখানে হতো। তাঁদের নিজেদের যাত্রাদল ছিলো। বোয়ালিয়া ও দিঘলদীতে ২টি সাংস্কৃতিক টোল ছিলো যা ১৯৬৫ সাল পর্যমত্ম টিকে ছিলো। টোল হতে বহু কৃতি ছাত্র ‘বিদ্যাবিনোদ’, ‘কাব্যতীথ’র্ উপাধিতে ভূষিত হতো। দিঘলদীর চন্দ্রমাধব শিরোমণি ও বোয়ালিয়ার শিবপ্রসাদ তর্কবাগীশ বোয়ালিয়ার সুপ্রসিদ্ধ পন্ডিত ছিলেন। ১৯০২ সালে ডাঃ নকুল চন্দ্র চক্রবর্তী ভক্তিভূষণ বোয়ালিয়ায় একটি হরিসভা স্থাপন করেন। এখানে হিন্দু ধর্মীয় সম্মেলন হতো। এতদ্উপলক্ষে পৌষমেলা এখনো হয়। ভারত ছাড় আন্দোলনে বোয়ালিয়া গ্রাম অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ধীরেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য (বোয়ালিয়া) ও প্রভাত চন্দ্র চক্রবর্তী (বরদীয়া) বিশিষ্ট বিপস্নবী ছিলেন। এ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আন্দামান দ্বীপে যাবজ্জীবন দ্বীপামত্মর করা হয়েছিলো। অপর বিপস্নবী অনমত্ম বণিক বা সাধু বিখ্যাত ছিলেন। তিনি আশ্রম চালাতেন। দূর্গাপূজা হতো বড় আকারের। কলকাতা থেকে শিল্পীরা আসতো। চমৎকার ফুলের বাগান ছিলো। বার মাস ফুল ফুটতো। ১৯৪২ সালে গুর্খা সৈন্যরা ঘেরাও করে এ আশ্রম। অনমত্ম বণিক সাধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শেষ উক্তি ছিল ’আজ আমি ধন্য, মনে হয় এতদিন আমি যে মায়ের সেবা করেছি, সে সেবার কিছুটা মা গ্রহণ করেছেন । তাই আজ আমি রাজদরবারের অতিথি হতে চললাম’। তারপরেও আশ্রম চলে। বর্তমানেও এ জায়গা আশ্রমের জায়গা নামে পরিচিত। বিপস্নবী ধীরেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য (বোয়ালিয়া), প্রভাত চন্দ্র চক্রবর্তী, (বরদিয়া) ও অনমত্ম বণিক এর উদ্যোগে একটি রাজনৈতিক ডাকাতি হয়েছিলো। ঢাঁকিরগাঁয়ের হাসেম আলী মাস্টারও এ দলে ছিলেন। বোয়ালিয়ার শেষ জমিদার বিনয়বালা মজুমদার, জানকি নাথ ভট্টাচার্য ও চন্দ্রকুমার খাদ্য বিলাসী ছিলেন বিধায় ভুড়িভোজ করতেন। একটি পাঠা একা খেয়ে ফেলতেন মর্মে কথিত আছে।
অবনী ঘোষ বিখ্যাত শিল্পী এবং চনদ্র শেখর বই এর শিল্পনির্দেশক ছিলেন যেখানে অশোককুমার ও কাননদেবী অভিনয় করেন। সুশীল মজুমদার বিখ্যাত সেতার বাদক ছিলেন। কলকাতা গিয়ে অনুষ্ঠান করতেন। প্রতাপচন্দ্র ও তার ভাই আগরতলা মহারাজার কোর্ট মিউজিশিয়ান ছিলেন। যোগেশ মালি্ও গনেশ মালি তদানিমত্মন সর্বশ্রেষ্ঠ যাত্রাদলের বিবেক নায়িকা ছিলেন। তখনকার দিনে ১০০/২০০ টাকা পেতেন যখন চালের দাম ছিল আড়াই টাকা মণ। জমিদার রমনী মোহন খুবই সৌখীন ছিলেন্। ২ মেয়ে বিয়ে হয়নি সমান মানের ঘর পাননি বলে। অনেক বইয়ের সংগ্রহ ছিলো যার মধ্যে এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকাও ছিলো। মার্বেল পাথরের টেবিল ও দামি গস্নাস ছিলো। ১৬ বেহারার পালকিতে চড়তেন। সুগন্ধিযুক্ত পান খেতেন। বউ মারা গেলে গহণাসহ দাহ করা হতো। ২ ছেলে মেট্রিক দেয়নি যদি কম নম্বর পায় এ মনে করে। (রমনী মোহনের বাড়িটি আজও বিদ্যমান যেখানে প্রনব চক্রবর্তী বর্তমানে বাস করেন)। রমনী রঞ্জন রায় ‘বাবু’ নামে খ্যাত ছিলেন। ডায়নামার সাহায্যে বৈদ্যুতিক পাখা ও বাতির সুবিধা ভোগ করতেন। ১ টাকা ফি নিয়ে বিচার করতেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস